লোককাহিনী অনুসারে ধারানগরের রাজা ভুজা কর্তৃক একাদশ শতকে এই নগরী প্রতিষ্ঠিত। রাজার নামানুসারে ভোপাল পরিচিত ছিল ‘ভুজপাল’ হিসেবে। আরেকটি মতানুসারে ভোপাল রাজার নামে ভোপালের নামকরণ করা হয়েছে।[৬][৭][৮] ধীরে ধীরে কালের বিবর্তনে তা হয়ে যায় ভোপাল। কিন্তু এর কোন প্রত্নতাত্ত্বিক সত্যতা পাওয়া যায়নি।
আধুনিক ভোপালের প্রতিষ্ঠাতা মোঘল সেনাবাহিনীর আফগান যোদ্ধা দোস্ত মোহাম্মদ খান (১৭০৭ – ১৭৪০)।[৯] তাকে বলা হয় ভোপালের প্রথম নবাব। ১৭০৮ সালে তিনি বেরাসিয়া এস্টেট লীজ নেন; সাথে আরো কতগুলো এলাকা যুক্ত করে প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমানের তিলোত্তমা ভোপাল নগরীকে[১০]।
বেগমেরা
১৮১৯ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে ভোপালে চারজন মহিলা শাসক রাজত্ব করেন।এঁদের নবাব বেগম বলা হত। কুদশিয়া বেগম তার রাজসভার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শ খারিজ করে তার ছোট্ট মেয়েকে ১৮১৯ সালে রাজ্যের পরবর্তী শাসক হিসাবে ঘোষণা করে দেন। দীর্ঘ ১৮ বছর কুদশিয়া সিংহাসনে তার কন্যার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। নিজের রাজ্যকে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, মারাঠা-সিন্ধিয়া-হোলকার ও গায়কোয়াড়দের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। যদিও, রাজ্যের বেশ কয়েকজন পারিষদ ব্রিটিশদের কাছে বেগমের বদনাম করেন। এভাবেই ভোপালের রাজবংশ রাজ্যের কন্যা সন্তানদের ও তাদের স্বামীদের অধীনে চলে আসে।কুদশিয়ার মেয়ে সিকান্দারের বিয়ে হয় তারই এক জ্ঞাতি-ভাই জাহাঙ্গিরের সঙ্গে। জাহাঙ্গির তেমন একটা জনপ্রিয় ছিল না, এমনকি জাহাঙ্গির তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে খুন করারও চেষ্টা করে। সিকান্দার নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে একটি দুর্গে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে অবশ্য সিকান্দার তার স্বামীকে বন্দিও করেন।
২৬ বছর বয়সে জাহাঙ্গিরের মৃত্যু হয়। তার ছয় বছরের কন্যা সন্তান শাহজাহানকে রাজ্যের পরবর্তী শাসক ঘোষণা করা হয়। শাহজাহান বেগমের বিয়ের পর তার স্বামী রাজ্য শাসন করেন। উত্তরাধিকারের ধারা নিয়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে কুদশিয়ার অনেক মনোমালিন্যের পর ব্রিটিশরা সেই ধারাটা জোর করে বাতিল করে দেয়। তাই প্রথমে সিকান্দার তারপর শাহজাহান বেগম ভোপালের শাসক হন। ১৯০১ সালে শাহজাহান বেগমের মৃত্যুর পর তার কন্যা সুলতানজাহান রাজত্ব ভার সামলান।
ভারতীয় ইউনিয়নে
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পরে ভোপালের শেষ নবাব ভোপালকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নবাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হলে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। শংকর দয়াল শর্মার মত পরিচিত নেতারা গ্রেফতার হন। ১৯৪৯ সালের ৩০ এপ্রিল নওয়াব ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের চুক্তিপত্রে সই করতে বাধ্য হন।[১১] ১৯৪৯ সালের ১ জুন ভারতের ইউনিয়ন সরকার ভোপালকে রাজ্যকে অধিগ্রহণ করে।