গুগল টক
![]() গুগল টক গুগলের জিমেইল এর জন্য তৈরীকৃত মেসেঞ্জার ইঞ্জিন। ইয়াহু মেসেঞ্জারের মত এটা দিয়ে মানুষের সাথে চ্যাট করা যায়। এর ভয়েস কলিং সিস্টেম অন্যান্য সব ইঞ্জিন থেকে উন্নতমানের। বৈশিষ্ট্যপণ্যের ইন্টিগ্রেশনগুগল টক জিমেইল–এর সঙ্গে একীভূত ছিল, যেখানে ব্যবহারকারীরা অন্য জিমেইল ব্যবহারকারীদের কাছে তাৎক্ষণিক বার্তা পাঠাতে পারত। যেহেতু এটি একটি ব্রাউজার–এর মধ্যে কাজ করত, তাই জিমেইল ব্যবহারকারীদের কাছে বার্তা পাঠাতে আলাদা করে গুগল টক ক্লায়েন্ট ডাউনলোড করার প্রয়োজন হতো না। কথোপকথনের লগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর জিমেইল অ্যাকাউন্টের ‘‘Chats’’ অংশে সংরক্ষিত হতো। এর ফলে ব্যবহারকারীরা তাদের পূর্বের কথোপকথন সহজে খুঁজে পেত এবং সব লগ একই অ্যাকাউন্টে কেন্দ্রীভূত থাকত। দীর্ঘদিন ধরে, ইমেইলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে সরাসরি চ্যাট লগ ডাউনলোড করা সম্ভব ছিল না। পরে গুগল টেকআউট সেবার মাধ্যমে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে IMAP ব্যবহার করে চ্যাট লগ ডাউনলোড করার সুযোগ চালু করা হয়। অর্কুট–এর সঙ্গেও গুগল টক যুক্ত ছিল। এতে ব্যবহারকারীরা অর্কুটে নিবন্ধিত সদস্যদের সঙ্গে ‘‘scraps’’ বিনিময় করতে পারত। তবে অর্কুট বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে। গুগল টক গ্যাজেট ছিল একটি ওয়েব–ভিত্তিক মডিউল যা iGoogle (এটিও বন্ধ হয়ে গেছে) এবং অন্যান্য ওয়েবসাইটে যোগ করা যেত। এর মাধ্যমে সরাসরি টেক্সট চ্যাট করা যেত। তবে পরবর্তীতে হ্যাংআউটস চালু হওয়ার পর এই ফিচার নীরবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। গুগল+–এর সঙ্গেও গুগল টক সংযুক্ত ছিল। স্ট্যান্ডঅ্যালোন ক্লায়েন্ট এবং জিমেইল ও গুগল+–এর উইজেটে গুগল+ কনট্যাক্ট দেখা যেত, এবং তাদের ‘‘circles’’–ও প্রদর্শিত হতো। তবে গুগল+–ও বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে। ভয়েস এবং ভিডিওজিমেইল–এর ভেতর থেকেই ফোন কল করা এবং রিসিভ করা যেত গুগল টকের মাধ্যমে। তবে কল রিসিভ করতে হলে ব্যবহারকারীকে গুগল ভয়েস–এর পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাউন্টে আপগ্রেড করতে হতো। শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকা ব্যবহারকারীরা পূর্ণ গুগল ভয়েস অ্যাকাউন্টে আপগ্রেড করতে পারত না এবং জিমেইলে ফোন কল রিসিভও করতে পারত না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকেও জিমেইলের মাধ্যমে আউটবাউন্ড কল করা যেত। গুগল টক ব্যবহারকারীরা ভয়েসমেইল রেখে যেতে পারত, এমনকি প্রাপক লগ–ইন না থাকলেও। সর্বোচ্চ ১০ মিনিট পর্যন্ত বার্তা রাখা যেত এবং ব্যবহারকারীরা চাইলে সেটি তাদের জিমেইল ইনবক্সে পাঠাতে পারত। গুগল টকের জন্য আলাদা ‘‘ভয়েস এবং ভিডিও চ্যাট ব্রাউজার প্লাগইন’’ও ছিল, যা উইন্ডোজ, ম্যাক ওএস এক্স এবং লিনাক্স–এ সমর্থিত ছিল। এটি ডাউনলোড ও ইন্সটল করতে হতো, কিন্তু ইন্সটল করার পর সরাসরি জিমেইলের সঙ্গে একীভূত হয়ে যেত। এনক্রিপশনগুগল টক ক্লায়েন্ট এবং সার্ভারের মধ্যে সংযোগ এনক্রিপ্টেড থাকত। তবে HTTP–এর মাধ্যমে জিমেইলে চ্যাট করলে এনক্রিপশন থাকত না। ব্যবহারকারীরা চাইলে OTR এনক্রিপশন ব্যবহার করে ‘‘এন্ড-টু-এন্ড’’ নিরাপদ বার্তা পাঠাতে পারত, যেমন Adium (ম্যাক) বা Pidgin (লিনাক্স ও উইন্ডোজ)–এর মাধ্যমে। গুগলের ‘‘Off the Record’’ আসলে OTR এনক্রিপশন ছিল না। বরং এটি কেবল লগ বন্ধ করে দিত, কিন্তু এনক্রিপশন সক্রিয় করত না। অফলাইন মেসেজিং১ নভেম্বর ২০০৬ থেকে গুগল টকে ‘‘অফলাইন মেসেজিং’’ চালু হয়। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের কনট্যাক্ট–কে বার্তা পাঠাতে পারত, এমনকি তারা অনলাইনে না থাকলেও। পরে প্রাপক অনলাইনে এলে বার্তাটি পেত। তবে এটি কেবল জিমেইল–টু–জিমেইল অ্যাকাউন্টে কাজ করত, অন্য এক্সএমপিপি সার্ভারে নয়। মোবাইল ডিভাইস সামঞ্জস্যতা৩০ জুন ২০০৬ তারিখে নকিয়া তাদের নকিয়া 770 ইন্টারনেট ট্যাবলেট–এর জন্য নতুন সফটওয়্যার প্রকাশ করে, যেখানে গুগল টক সমর্থিত ছিল। একইভাবে সনি–র Mylo ডিভাইসেও ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ থেকে গুগল টক যুক্ত ছিল। ব্ল্যাকবেরি–র জন্যও আলাদা গুগল টক ক্লায়েন্ট পাওয়া যেত। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে গুগল টক একীভূত ছিল, তবে অ্যান্ড্রয়েড ২.৩.৪–এর আগে পর্যন্ত ভয়েস ও ভিডিও কল সমর্থিত ছিল না। এটি প্রথম যুক্ত হয় নেক্সাস S–এ এপ্রিল ২০১১–তে। গুগল টক যেহেতু এক্সএমপিপি প্রোটোকল ব্যবহার করত, তাই তাত্ত্বিকভাবে যে কোনো মোবাইল ফোন যেখানে XMPP ক্লায়েন্ট চালানো সম্ভব, সেখানে গুগল টক ব্যবহার করা যেত। তবে অনেক ক্ষেত্রে Java ME অ্যাপ চালালে নিরাপত্তা সতর্কতা আসত অথবা মোবাইল অপারেটর সীমাবদ্ধতা দিত। নিমবাজ় ও ফ্রিং–এর মতো তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ্লিকেশনেও গুগল টক সমর্থন ছিল, যেখানে VoIP কলও করা যেত। টেক্সট ফরম্যাটিংগুগল টক–এ টেক্সট ফরম্যাটিং–এর জন্য কোনো আলাদা মেনু ছিল না। তবে কিছু সাধারণ ফিচার সমর্থিত ছিল, যেমনঃ
তবে সব ক্ষেত্রে এটি সমানভাবে কাজ করত না, বিশেষ করে অন্য এক্সএমপিপি ক্লায়েন্ট থেকে বার্তা এলে। ইতিহাস২০০৫২২ আগস্ট ২০০৫ তারিখে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায় যে গুগল একটি ‘‘কমিউনিকেশনস টুল’’ চালু করতে যাচ্ছে এবং লস এঞ্জেলেস টাইমস এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেয়। এরপর দেখা যায় যে সাবডোমেইন talk.google.com–এ একটি সক্রিয় এক্সএমপিপি সার্ভার চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সার্ভারে লগইন করার দুটি উপায় আবিষ্কৃত হয় এবং উৎসাহী ব্লগারদের মাধ্যমে অন্য অনেকেই অফিসিয়াল ঘোষণার আগেই লগইন করতে শুরু করে। ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় যারা পোর্ট ৫২২২ দিয়ে সংযুক্ত ছিল তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং আর লগইন করতে পারছিল না। তবে যারা পোর্ট ৫২২৩ ব্যবহার করছিল তারা তখনও অনলাইনে থাকতে পারে। পরে তাদের কাছে gmail.com নামক একটি আইডি থেকে ব্রডকাস্ট মেসেজ আসে যেখানে লেখা ছিল ‘‘The broken link has been fixed. Thanks for being our first users!’’। এরপর পোর্ট ৫২২২ পুনরায় চালু হয়। ২৪ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে গুগল টক প্রকাশিত হয়। ১৫ ডিসেম্বর ২০০৫ তারিখে গুগল ‘‘libjingle’’ নামে একটি C++ লাইব্রেরি প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে ভয়েস ওভার আইপি, ভিডিও ও অন্যান্য পিয়ার-টু-পিয়ার মাল্টিমিডিয়া সেশন চালানো যেত। এটি বিএসডি লাইসেন্স–এর আওতায় প্রকাশিত হয়। ২০০৬২০০৬ সালে গুগল ঘোষণা দেয় যে তারা এসআইপি প্রোটোকল সমর্থন আনার জন্য কাজ করছে, যাতে প্রোগ্রামের ব্যবহার আরও বাড়ানো যায়। ১৭ জানুয়ারি ২০০৬ তারিখে গুগল সার্ভার-টু-সার্ভার কমিউনিকেশন চালু করে, যার ফলে dialback প্রোটোকল সমর্থনকারী যে কোনো XMPP সার্ভারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬–এ জিমেইল–এ ‘‘চ্যাট ফাংশন’’ চালু হয়, যা অ্যাজাক্স–এর মাধ্যমে সার্ভার ও ব্রাউজারের মধ্যে কাজ করত। এতে জিমেইল সরাসরি গুগল টকের সঙ্গে একীভূত হয়। এরপর ব্যবহারকারীরা একে ডাকনাম দেয় ‘‘GChat’’। আগস্ট ২০০৬–এ গুগল ও ইবে ঘোষণা দেয় যে তারা স্কাইপ–এর সঙ্গে গুগল টকের ইন্টারঅপারেবিলিটি নিয়ে কাজ করবে। তবে ২০১১ সালে মাইক্রোসফট স্কাইপ কিনে নেওয়ার পর এই উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। ৮ নভেম্বর ২০০৬ তারিখে গুগল টক অর্কুট–এর সঙ্গে একীভূত হয়। ২০০৭১৪ মার্চ ২০০৭–এ গুগল ‘‘গুগল টক গ্যাজেট’’ প্রকাশ করে, যা অ্যাডোব ফ্ল্যাশ–ভিত্তিক ছিল। এটি iGoogle অথবা যেকোনো ওয়েবসাইটে এম্বেড করে ব্যবহার করা যেত। ১৮ মে ২০০৭–এ ‘‘গুগল অ্যাপস’’ প্রেজেন্টেশনে একটি স্ক্রিনশট প্রকাশিত হয় যেখানে গুগল টকের ফোন ইন্টিগ্রেশন দেখা যায়। ২ মার্চ ২০০৮–এ একজন গুগল ইঞ্জিনিয়ার নিশ্চিত করেন যে তারা এটি অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহার করে আসছিল। ২৬ নভেম্বর ২০০৭–এ গুগল টকে ‘‘গ্রুপ চ্যাট’’ চালু হয়। এর আগে কেবল একজনের সঙ্গে একটি উইন্ডোতে কথা বলা যেত। ৬ ডিসেম্বর ২০০৭–এ গুগল AIM সমর্থন চালু করে। এর ফলে জিমেইল ব্যবহারকারীরা AIM ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সরাসরি চ্যাট করতে পারত। তবে গুগল টক ক্লায়েন্টে এই ফিচার আনা হয়নি। ২০০৮২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮–এ ‘‘চ্যাটব্যাক’’ ফিচার যুক্ত হয়। এর মাধ্যমে গুগল টক অ্যাকাউন্টধারী এমন ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলতে পারত, যাদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট ছিল না। এর জন্য একটি ব্যাজ তৈরি করে ওয়েবপেজে যুক্ত করতে হতো। ১১ নভেম্বর ২০০৮–এ ‘‘গুগল চ্যাট’’ (ভয়েস ও ভিডিও চ্যাট) চালু হয়, যাতে কম্পিউটার–টু–কম্পিউটার কল সম্ভব হয়। একই সময়ে গুগল ক্রোম–এর প্রাথমিক বিল্ড থেকে বোঝা যায় যে নতুন টক ক্লায়েন্ট তৈরি হচ্ছে। এই সময়ে XMPP Jingle ড্রাফট স্ট্যান্ডার্ড হয় এবং গুগল ‘‘libjingle’’ আপডেট করে। এছাড়াও ‘‘Google Talk, Labs Edition’’ প্রকাশিত হয়েছিল, তবে এতে অন্যান্য সংস্করণের অনেক ফিচার অনুপস্থিত ছিল। ২০১২২০ এপ্রিল ২০১২–এ গুগল গুগল টকের মোবাইল ওয়েব অ্যাপ বন্ধ করে দেয়। জুন ২০১২–এ ঘোষণা করা হয় যে গুগল টক, হ্যাংআউটস ও গুগল মেসেঞ্জার একত্রিত করে একটি নতুন অভিজ্ঞতা আনা হবে। ২০১৩গুগল I/O 2013 কনফারেন্সে ঘোষণা করা হয় যে গুগল টক, গুগল+ মেসেঞ্জার ও পুরনো হ্যাংআউট ভিডিও চ্যাট একত্রিত করে গুগল+ হ্যাংআউটস আনা হবে। ১৫ মে ২০১৩–এ গুগলের ম্যানেজার নিকিল সিংহল ঘোষণা দেন যে নতুন হ্যাংআউটসে এক্সএমপিপি সমর্থন থাকবে না। তবে যতদিন গুগল টক সক্রিয় থাকবে, ততদিন তৃতীয় পক্ষের ক্লায়েন্ট দিয়ে ব্যবহার করা যাবে। ২০১৪৩০ অক্টোবর ২০১৪–এ ঘোষণা করা হয় যে ‘‘উইন্ডোজের জন্য গুগল টক’’ আরও দুই মাস কাজ করবে, তারপর বন্ধ হয়ে যাবে। ২০১৫৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫–এ ব্যবহারকারীদের জানানো হয় যে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘‘উইন্ডোজের জন্য গুগল টক’’ বন্ধ হয়ে যাবে এবং এর পরিবর্তে নতুন হ্যাংআউটস ক্রোম অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫–এ গুগল জানায় যে তৃতীয় পক্ষের ক্লায়েন্টগুলোর জন্য XMPP সাপোর্ট চালু থাকবে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ থেকে অফিসিয়ালি বন্ধ হওয়ার পরও কয়েকদিন সফটওয়্যার কাজ করে, তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে লগইন করা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবহারকারীরা ইমেইলে জানানো হয় যে ‘‘উইন্ডোজের জন্য গুগল টক বন্ধ করা হয়েছে, হ্যাংআউটস ব্যবহার করার অনুরোধ করা হচ্ছে।’’ তবে Pidgin ও গাজিম–এর মতো জ্যাবার প্রোটোকল–ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আংশিকভাবে ব্যবহার করা যেত। ২০১৭২৬ জুন ২০১৭ তারিখে অ্যান্ড্রয়েড–এর জন্য গুগল টক অ্যাপ এবং জিমেইল–এর চ্যাট টুল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কেবল তৃতীয় পক্ষের XMPP ক্লায়েন্ট দিয়ে ১–টু–১ চ্যাট করা যেত। ২০২২মে ২০২২–এ গুগল ঘোষণা দেয় যে তৃতীয় পক্ষের অ্যাপের মাধ্যমে গুগল টক সার্ভারে সংযোগের সুযোগও ১৬ জুন ২০২২ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর ফলে গুগল টক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তথ্যসূত্রবহিঃসংযোগ
|